একজন মানুষ আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর আমার সাথে রিলেশনে যাবে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরে সে আমাকে বলল। আমার সাথে সে রিলেশনে যেতে পারবে না। কারণ আমি তাঁর থেকে হাইটে ছোটো। সে মানুষের হাসিঠাট্টা শুনতে পারবে না। তাই নিজের থেকে কোনো খাটো ছেলের সাথে প্রেম করবে না। শুধুমাত্র হাইট কম থাকার কারণে নিজের কাছের মানুষটা যে এভাবে পর হয়ে যাবে আমি কখনো কল্পনাও করিনি। অথচ সেই একদিন আমাকে নিশ্চয়তা দিয়েছিলো ভার্সিটি এডমিশনটা হয়ে গেলেই আমার সাথে নিয়মিত কথা বলবে,রিলেশনে যাবে। তাঁর কথাতেই আমি আশায় বুক বেঁধে ছিলাম,তাকে আপন করে পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম৷ কিন্তু স্বপ্নটা যে স্বপ্নই থেকে যাবে,কখনো বাস্তবে রুপ নেবে না। সেটা জানা ছিল না।
ইসরাতের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল আমাদের কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে। আমি সবেমাত্র কলেজ পাশ করে অনার্সে ভর্তি হয়েছি। সেদিন কলেজে গিয়েছিলাম একটা দরকারে। সেদিনই আমি ইসরাতকে প্রথম দেখি। সহজসরল নিষ্পাপ মুখের একটা মেয়েকে দেখে আমার ভিতরের সত্তাটাতে হালকা কাঁপুনি সৃষ্টি হয়েছিলো। তাকে দেখার পরে মনে হয়েছিলো আজকে হয়তো পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর আর পবিত্র মুখের মানুষটাকে আমি দেখে ফেললাম। এই মানুষটাকে আমার দরকার,যে-কোন মূল্যে মানুষটাকে আমার দরকার। তাই দেরি না করে পরের দিনই আমি ইসরাতের সাথে কথা বলি। কিছুদিন তাকে ফলো করি তারপর সাহস করে একদিন তাঁর কাছে ফোন নাম্বার চেয়ে বসলাম। সেও না করল না। নাম্বার পেয়ে আমার ভিতরেও যেনো সমস্ত রাজ্যের সুখ বিরাজ করতে লাগল। আমি ডানাছাড়া পাখির মতো উড়তে লাগলাম,দৌড়াতে লাগলাম। হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন সামান্য নাম্বার পেয়ে এতো খুশি হওয়ার কি আছে? কিন্তু অনেকের কাছে সামান্য হলেও আমার কাছে অনেক কিছু। কারণ আমি জীবনে প্রথম কোনো মেয়ের কাছে নাম্বার চেয়েছি এবং সে দিয়েছে। ভালো লাগাটা এখানেই।
নাম্বার নেওয়ার পর থেকে তাঁর সাথে খুব একটা দেখা হতো না। ফোনেই কথা হতো মাঝেমধ্যে। তারপর ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপে এড হওয়ার পর ফোনেও কথা কম হতো। তাঁর সাথে আমি টানা দেড় বছর নিয়ম করে কথা বলেছি। তখনও আমাদের প্রেমটা হয়ে উঠেনি,হওয়ার দারপ্রান্তে ছিলো। একদিন তাকে ভালোবাসি কথাটা বললাম। সে বলল আমাকেও তাঁর ভালো লাগে কিন্তু তাঁর একটু সময় দরকার রিলেশনে যাওয়ার জন্য। তাছাড়া সামনে যেহেতু ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল তাই সে চেয়েছিলো পরীক্ষাটা ভালো ভাবে দেওয়ার পরে আমার সাথে কথা বলা শুরু করবে নিয়মিত যেটাকে রিলেশন বলা চলে। আমিও মেনে নিলাম কারণ আমিও চাইতাম ইসরাত ভালো একটা রেজাল্ট করুক। তাই তাঁর পরীক্ষার কয়েকমাস আগে থেকে তাঁর সাথে কথা হতো না। আমি চাইনি আমার জন্য তাঁর পড়াশোনার ক্ষতি হোক।
ইসরাতের ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলো,শেষ হওয়ার পর সে বলল। তাঁর আরও একটু সময় দরকার। এডমিশন দেওয়ার জন্য ঢাকা যেতে হবে কোচিং করার জন্য। সে এডমিশনটা পুরোপুরি শেষ করে আমার সাথে সম্পর্কে জড়াতে চায়। আমি এবারও মেনে নিলাম। কারণ মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না আমার। সে ঢাকাতে কোচিং করতে যাওয়ার পর কথা হতো না তাঁর সাথে। সে নিজ থেকে কখনো ফোন দিতো না,আমিও কখনো ফোন দিতাম না এটা ভেবে হয়তো সে পড়াশোনা নিয়ে অনেক ব্যস্ত,সেজন্য আমাকে ফোন দিতে পারে না। এডমিশন শেষ হলো,সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলো। সে চান্স পেয়েছে এটার জন্য আমার ভিতরে কোনোকিছু কাজ করেনি। তাঁর সাথে আমি রিলেশন কন্টিনিউ করব এটার জন্য আমার ভিতরে অনেক উত্তেজনা কাজ করছিলো। কারণ আমি দুই বছরের বেশি সময় ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছি। ইসরাত আমাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলবে।
ইসরাত আমাকে ফোন দিয়ে বলল আমার সাথে দেখা করবে। অনেকদিন পর তাঁর সাথে দেখা হবে। ভাবলাম তাঁর জন্য কিছু নিয়ে যাই কিন্তু টাকা না থাকার কারণে নিতে পারলাম না। বের হওয়ার সময় বাবার মায়ের ঝগড়াটা কানে বাজল। যদিও এটা নিত্য নতুন ঘটনা তবুও আমার প্রতিদিনই খারাপ লাগে তাদেরকে এরকম ভাবে ঝগড়া করতে দেখলে। হোক না খারাপ তবুও তো তারা আমার বাবা মা। এবার মনে হয় আব্বু আম্মুর ডিভোর্সটা হয়েই যাবে। অনেকদিন ধরেই কথাবার্তা চলছিলো। তাই আমি দুজনের কারো সাথেই কথা বলতে চাইতাম না। কারণ এই দুজন মানুষকে আমি অনেক ঘৃণা করি। তারা অন্তত আমার কথা চিন্তা করে মানিয়ে নিতে পারত,সংসারটা করতে পারত। এই বয়সে যদি বাবা মায়ের ডিভোর্স হয় তাহলে একটা ছেলের জন্য কতোটা লজ্জাকর সেটা শুধু সেই বুঝবে যে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। আমি ইসরাতের জন্য কোনো উপহার নিতে পারলাম না। হয়তো বাবার কাছে টাকা চাইলে দিতো বিনিময়ে কিছু কথা শোনাতো। তারপরও কেনো জানি বাবা নামক মানুষটার কাছে টাকা চাইতে ইচ্ছে করল না। তাই খালি হাতেই ইসরাতের সাথে দেখা করতে চলে গেলাম।
ইসরাত দাড়িয়ে আছে,আমি তাঁর সামনে গিয়েই তাকে স্যরি বলা শুরু করলাম। কারণ আমি অনেকটা দেরি করে ফেলেছি৷ সে কিছু বলল না। নীরবতার দেয়াল ভেঙে প্রথম কথাটা আমিই বললাম।
"কেমন আছেন?"
"ভালো আছি,আপনার কি অবস্থা?"
"আমিও ভালো আছি। আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করালাম সেজন্য দুঃখিত।"
"ইটস ওকে। সমস্যা নেই। আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। সেগুলো বলার জন্যই আপনাকে ডেকেছি।"
"এখন আবার কিসের কথা। শোনেন এখন কোনো কথা হবে না। আমি কিন্তু আপনার হাত ধরে হাঁটার প্রিপারেশন নিয়ে এসেছি বাসা থেকে। আজকে এই খোলা আকাশের নিচে আমি আপনার হাত ধরে কিছুটা পথ হাঁটতে চাই। আপনাকে নিজের একান্ত গোপন কথাগুলো অকপটে বলে দিতে চাই। বলতে চাই আপনাকে আমার দরকার।"
"চুপ করেন তো। আগে আমার কথাগুলো শুনবেন তো?"
"আচ্ছা বলেন,কি বলবেন।"
"আমি প্রথমেই ক্ষমা চাচ্ছি আপনার সাথে রিলেশনটা করতে পারব না। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু সেটা না বুঝে আবেগে দিয়ে ফেলেছিলাম। আমি এখন বাস্তবতা বুঝতে পারছি। আপনি আমার থেকে হাইটে ছোট। রাস্তা দিয়ে যখন আপনার সাথে একসাথে হাঁটব তখন হয়তো অনেকেই হাসাহাসি করবে। আমি এগুলো নিতে পারব না। আরও অনেক কারণ বলতে পারতাম কিন্তু আমি মেইন কারণটাই বললাম। রিলেশন না করার জন্য আপনি আমাকে যা খুশি বলতে পারেন,খারাপ মেয়ে ভাবতে পারেন,গালাগালি করে নিজের রাগটা আমার ওপর ঝাড়তে পারেন। কিংবা থাপ্পড়ও মারতে পারেন। যা ইচ্ছে বলতে পারেন আপনি। আমি শোনার জন্য প্রস্তুত আছি। কারণ আমি জানি নিজের স্বার্থের জন্য আমি আপনার সাথে যেটা করেছি সেটা করা উচিত হয়নি আমার। কিন্তু আমি আশেপাশের মানুষের কটু কথাগুলো নিতে পারব না। হয়তো আপনি আমাকে অনেক কিছু বুঝাবেন কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসব না আপনার খারাপ লাগলেও মেনে নিতে হবে। তাই যা বলার আজকেই বলবেন,আজকের পর থেকে আপনি আমাকে কখনো ফোন দিতে পারবেন না,মেসেজ দিতে পারবেন না। দিলে আমি আমার পরিবারকে জানাতে বাধ্য হবো।"
আমি এতক্ষণ ইসরাতের কথাগুলো বোকার মতে দাড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে শুনছিলাম। কেনো জানি বিশ্বাসই হচ্ছিলো না কথাগুলো ইসরাত আমাকে বলছে। কিন্তু কষ্ট হলেও বিশ্বাস করতে হলো। কারণ পৃথিবীর সবকিছু অবিশ্বাস করা গেলেও নিচের চোখ আর কানকে তো আর কখনো অবিশ্বাস করা যায় না। পারিবারিক অশান্তিটা থেকে ভেবেছিলাম ইসরাত আমাকে মুক্তি দিবে। কারণ তাঁর সাথে কথা বললে দিনদুনিয়া কিছু মনে থাকত না আমার। আমি বাবা মায়ের কথা ভুলে যেতাম,তাদের মাঝে কি চলছে,ভবিষ্যতে কি হবে এগুলো মনে হতো না যখন তাঁর সাথে কথা বলতাম। আমি অনেকটা সময় পর ইসরাতের কথাগুলোর বিপরীতে বললাম।
"না ঠিক আছে। সমস্যা নেই। আমি কিছু মনে করিনি। আপনি যে কয়টা দিন আমার সাথে কথা বলেছেন তাঁর জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার জীবনে ভালো থাকার মুহূর্ত খুব একটা নেই। খারাপ থাকার পরিমাণটাই বেশি। কিন্তু আপনার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে আমি অনেকটা সময় ভালো অনুভব করেছি। বিশেষ করে যখন আপনার সাথে কথা বলেছি,যখন আপনাকে নিয়ে ভেবেছি সেই সময়টা আমি ভালো থাকতাম। আপনি আমাকে ভালো কিছু সময় উপহার দিয়েছেন এটাই অনেককিছু আমার কাছে। আপনার ওপর আমার কোনো রাগ নেই,কোনো অভিমান নেই। আপনাকে কখনো ফোন দিব না কিংবা মেসেজও করব না। আপনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করিয়েন না। আপনি নিশ্চিন্তে আপনার নতুন জীবন শুরু করেন। আমি কখনোই আপনার পথের কাটা হয়ে রাস্তা আটকাবো না।"
কথাগুলো বলে আমি ইসরাতের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে আসলাম। আমি চাইনা জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো আবার এই মানুষটার সাথে নতুন করে আমার দেখা হোক,কথা হোক। তাকে একটাবার বলতে চেয়েছিলাম তাঁর হাত ধরে কিছুটা পথ হাঁটতে চাই আমি। হয়তো সে না করত না। প্রথমবার এবং শেষবারের মতো তাঁর হাতটা ধরতে দিতো কিন্তু যে হাতটা সবসময়ের জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে সেই হাতটা ধরেই বা কি লাভ? শুধু আফসোসের পাল্লাটা ভাড়ি হবে এর বেশি কিছু নয়। বাসায় গিয়ে আর মনখারাপ করার মতো অবস্থা ছিল না কারণ ভিতরটা আগেই ক্ষতবিক্ষত হয়েছে ইসরাতের ওই একটা কথাতে। সে যদি অন্য কোনো কারণে রিলেশন না করতো তাহলে আমার ওতটা খারাপ লাগত না। কিন্তু সে আমার হাইট নিয়ে কথা বলল। অথচ এটাতে আমার কোনো হাত ছিলো না,থাকলে নিশ্চয়ই দুতিন ইঞ্চি হাইট বাড়িয়ে নিতাম। তাই বাড়ি গিয়ে যখন দেখলাম বাবা মা দুজনেই আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তখন আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছিলো না। একটা মানুষ তো এতো মন খারাপ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে না কিন্তু আমাকে বাচঁতে হচ্ছে,হয়তো ভবিষ্যতেও হবে । বাবা, মাকে আঘাত করেছিল সেটার বিপরীতে মাও বসে থাকেনি। বাবার মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়েছে। মায়ের নাকমুখ টা ফুলে গিয়েছে,বাবার মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। আমি কারো জন্যই মায়া দেখাতে পারলাম না। আমার কথাটায় সত্যি হলো। কিছুদিনের মাঝে তাদের ডিভোর্স হয়ে গেলো।
আমি ভেবেছিলাম আমাকে নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি লেগে যাবে। বাবা মা দুজনেই আমাকে নিতে চাইবে। কিন্তু কেউ আমাকে নিতে চাইলো না। মা,বাবাকে বলল,"তোর মতো খারাপ মানুষের সন্তান আমি আমার কাছে রাখতে পারব না।"
বাবা বলল" এই সন্তানটা আমার না। তুই একটা নষ্টা মহিলা। এটা তোর সন্তান,আমার না।"
আমার কেনো জানি কান্না পাওয়ার বদলে হাসি পাচ্ছিলো। আমার বাবা আমাকে পরিচয় দিচ্ছে না নিজের সন্তান বলে। মাও পরিচয় দিচ্ছে না। আসলে আমার পরিচয়টা কি আমি নিজেও জানি না। এরা কি আসলেই আমার বাবা মা? বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। এই দুজন মানুষই আমার জন্মদাতা পিতা এবং মাতা। কিন্তু তারা তাদের দাম্পত্য জীবনের অশান্তির জন্য আমাকে স্বীকার করতে চায় না। দোষটা বাবা মাকে দিব নাকি নিজের ভাগ্যকে দিব? বুঝতে উঠতে পারি না আমি।
মা চলে যাওয়ার আগে আমাকে কিছু দিয়ে যায়নি। বলেও যায়নি কিছু। বাবা চলে যাওয়ার আগে করুণা করে বাড়িটা দিয়ে গিয়েছিলো সাথে কিছু গ্রামের জমিজমা। দুমাসের মাথায় শুনতে পারলাম বাবা মা দুজনেই আবার বিয়ে করেছেন তবে সেটা আলাদা আলাদা। আমি আবারও হাসলাম,সাথে একটু অশ্রুও ঝরালাম। বাবা মা এই বয়সেও বেঁচে থাকার সঙ্গী পেয়ে গেলো। অথচ আমি একজন সঙ্গী পেলাম না। আমার গ্রামে ভালো লাগছিল না। একাকিত্ব জীবনটা প্রাণহীন জীবনের মতো। ভয় হতে লাগল নিজেকে নিয়ে। কে জানে? কখনো হয়তো বা সুইসাইড নামক শব্দটাতে নিজেকে বেঁধে ফে়লব। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কোলাহলপূর্ণ এক শহরে চলে যাবো।
জমিজমা,বাড়িঘর এগুলো বন্ধক রেখে যা পেলাম সেটা নিয়েই রওনা হলাম অপরিচিত শহর ঢাকাতে। আমি ঢাকায় গিয়ে কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। ছোটো হলেও কিছু করব এই চিন্তা নিয়েই আমি ঢাকাতে আসি। কিন্তু লোক না থাকার কারণে কিছু করে উঠতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে একটা শপিংমলে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি পাই। আমি সেখানেই ঢুকে পড়ি। অন্তত মানুষের মাঝে থাকতে পারব। এই শহরের বিচিত্র রকমের মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখতে পারব। আর মাস শেষে যে টাকাগুলো পাবো ওটা দিয়ে কোনোমতে চলে যাবে। আর যদি পারি নিজের ভাঙাচুরা লেখাপড়াটা চালিয়ে যাবো।
শপিংমলের নিচে দাড়িয়ে ডিউটি করছিলাম। হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম কয়েকটা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার দিকে বলতে শপিংমলের দিকে। তাদের মাঝে একজনকে চেনা চেনা লাগছে কিন্তু চিনতে পারছি না। একটা সময় চিনতে পারলাম মানুষটাকে। আমি কখনো ভাবিনি ইসরাতের সাথে আবার কখনো দেখা হবে আমার,সেটাও এই পরিস্থিতিতে। ইসরাত আমাকে দেখার পরে হয়তো ভাববে তাঁর সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিলো। সে যা করেছে সেটাই ঠিক। আমি কোনোকালেই তাঁর যোগ্য ছিলাম না। আমার সাথে রিলেশন থাকলে হয়তো তাঁর বান্ধবীদের সামনে তাকে আজকে লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গেছে সে কিন্তু আমি তো বাঁচতে পারলাম না। ইসরাতের সামনে পড়তেই হলো আমাকে। তাঁর কাছে ছমাস আগেও তুচ্ছ একজন মানুষ ছিলাম,আজকেও তুচ্ছ একজন মানুষ হিসেবেই দেখা হবে। এটা ভাবতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু ইসরাতের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া আমার কিছু করার ছিল না।"
চলবে.................
#পর্ব_১
#জীবন_সংগ্রাম
#আমিনুররহমান
0 Comments