#জীবন_সংগ্রাম
#পর্ব-৫ (শেষ পর্ব)
#আমিনুর_রহমান
ইসরাতকে দেখে আগের মতোই আমি নীরবতা বিরাজ রাখলাম। নিজ থেকে কথা বলার মতো সম্পর্কটা সে রাখেনি তাই কখনো নিজ থেকে কথা বলতে যাওয়ার ইচ্ছে জাগেনি তাঁর সাথে। অবাক হলাম তখন,যখন নাদিয়া তাঁর বান্ধবীদের সবাইকে বলল আমি নাকি তাঁর হবু হাসবেন্ড,তাঁর সাথে নাকি আমার বিয়ে হওয়ার কথাবার্তা চলছে। একেবারে মিথ্যাও বলেনি সে। আসলেই তো আমাদের দুজনের বিয়ের কথা চলছে। যদিও এটা নিয়ে আমি কখনো ওইভাবে চিন্তা করিনি। নাদিয়াকে কিছু বলতে ইচ্ছে করল না। অন্তত এই ভরা মজলিসের সামনে তাঁর মাথা নিচু হয়ে যাক এটা আমি চাই না। প্রথম প্রথম নাদিয়াকে আমার বেহায়া মনে হতো। কিন্তু এখন কেনো জানি সেটা মনে হয় না। আমাকে সে এতো এতো মানুষের সামনে নিজের হবু হাসবেন্ড বলে পরিচয় দিতে একটাবারের জন্যও সংকোচবোধ করল না। অথচ কেউ একজন আমাকে তাঁর বান্ধবীদের সাথে নিজের বয়ফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিতে লজ্জা পেতো। এইসব ছোটোখাটো ব্যাপারগুলো থেকেই নাদিয়াকে আমার একটু একটু ভালো লাগতে শুরু করে৷ জানি না এই ভালো লাগাটা কোথায় গিয়ে দাড়াবে।
হঠাৎ করেই ইসরাত আমার পাশে এসে দাড়ালো,নাদিয়াও ঠিক আমার পাশে দাড়িয়ে ছিল কিন্তু সে তাঁর বান্ধবীদের সাথে কথা বলছিলো। সেজন্য হয়তো বা সে ইসরাতকে ওইভাবে খেয়াল করেনি। আমি কিছু বলার আগেই ওদিক থেকে ইসরাত প্রশ্ন ছুড়ে মারল।
"বিয়ে করছো তাহলে? "
আমি হেসে বললাম।
"করিনি এখনও,তবে মনে হয় বিয়েটা হয়ে যাবে। মেয়েটা অনেক ভালো,আমি মনে হয় তাকে না বলতে পারব না।"
আমার কথাগুলো ইসরাতকে কিছুটা হলেও ব্যথিত করল। তাই হয়তো বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল।
"মেয়েটা অনেক সুন্দর,তোমার সাথে অনেক মানাবে। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি,অকারণে তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম।"
আমি ইসরাতকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম।
"থাক,যেগুলো জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেগুলো নিয়ে কথা না বলাটাই মনে হয় আমাদের জন্য ভালো। তুমি হয়তো অনেক চিন্তাভাবনা করেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিল। এমনিতেই পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেলে মানুষের মনে একটু অহংকার জন্ম নেয়,হয়তো সেখান থেকেই আমাদের সম্পর্কটার অবনতি শুরু হয়েছিল। তবে বিশ্বাস করো আমি সব ভুলে গিয়েছি,তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই আমার।"
কথা বলার এক পর্যায়ে নাদিয়া আমাদের লক্ষ্য করল। দেখামাত্রই জিজ্ঞেস করল মেয়েটাকে কে? আমিও ভনিতা না করে সব বলে দিলাম। তবে তাকে বললাম না এই মেয়েটার সাথে একটা সময় আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো,শুধু বললাম বন্ধু ছিল কোনো একটা সময়।
ইসরাতের মনটা খারাপ মনে হলো,কেনো জানি না তাকে দেখে আজ কেমন যেনো মায়া হলো। সে আমাকে ছেড়ে গিয়েছিল ঠিকই তবে কোনো রিলেশনে জড়ায়নি। কিন্তু সে চাইলে তো রিলেশন করতে পারত,করেনি কেনো? এই প্রশ্নটার উত্তর আমার জানা নেই। তবে অবাক হলাম এতোদিন কখনো ইসরাত আমার সাথে এতটা মায়া নিয়ে কথা বলেনি,বেশিরভাগ সময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেই কথা বলেছে। আজকে হঠাৎ করে তাঁর এতটা পরিবর্তনে আমি অনেকটা অবাক হয়েছি। মেয়েরা হয়তো এমনই,থাকতে মূল্য দিবে না,কিন্তু যখন দেখবে অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে তখন হয়তো আফসোস করবে।
অনুষ্ঠান শেষে যখন বাড়ি ফিরব তখন নাদিয়াকে বললাম।
"কাজটা কি ঠিক করছেন?"
নাদিয়া বলল।
"কোন কাজটা।"
আমি বললাম।
"এই যে বিয়ে বাড়ির এতো এতো মানুষের সামনে আমাকে আপনি নিজের স্বামী বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন অথচ আপনি জানেন আমাদের বিয়েটা এখনও পাকাপোক্ত হয়নি। আমি তো আপনাকে পছন্দ নাও করতে পারি। এমনও তো হতে পারে আমি আপনাকে রেখে হারিয়ে যাবো।"
আমার কথাগুলো শুনে নাদিয়ার মন খারাপ হওয়ার কথা থাকলেও সে মন খারাপ করল না। হাসিমাখা মুখ নিয়েই আমাকে বলল।
"স্বামী হিসেবে আর কই পরিচয় করিয়ে দিলাম? আমি তো বলেছি হবু স্বামী। আর তাছাড়া আপনি আমাকে বিয়ে না করে পারবেন না। আমার মতো করে আপনাকে কেউ কখনো ভালোবাসেনি,ভবিষ্যতেও বাসতে পারবে না। এটা যেদিন আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন সেদিন আপনি নিজ থেকেই ভালোবাসি বলবেন আমাকে। আর আমার মনে হয় এই সত্যিটা খুব তাড়াতাড়ি আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন।"
আমি তাঁর কথার বিপরীতে খুব সুন্দর করেই বললাম।
"জ্বি ঠিকই বলেছেন,আমাকে কেউ কখনো ভালোবাসেনি,তাই ভালোবাসা জিনিসটার নাম শুনলে ভয় কাজ করে। আমাকে প্রথম প্রথম সবারই ভালো লাগে কিন্তু যখন আস্তে আস্তে আমার সম্পর্কে জানতে পারে তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু হয়। তখন আর আমাকে কারো ভালো লাগে না। কিছু মানুষ থাকে যাদের প্রতি মানুষের ভালো লাগাটা দিনদিন বাড়তেই থাকে আর কিছু মানুষ থাকে যাদের প্রতি ভালো লাগাটা সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে কমতে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত আমি দ্বিতীয় পর্যায়ের মানুষের মাঝে পড়ি। তাই আমি সিউর কিছুদিন পর আপনারও আমাকে এতোটা ভালো লাগবে না,ভালোবাসতেও চাইবেন না।"
আমার এতো বড় রচনার বিপরীতে নাদিয়া তেমন কিছু বলল না। ছোট্ট করে শুধু বলল।
"সময় সবকিছু বলে দিবে। দেখা যাক আপনার কথা সত্যি হয় কিনা।"
বাড়ি ফিরতে অনেকটা রাত হয়ে গেলো। বাবা মা কেউ জিজ্ঞেস করল না কেনো এতো রাত হলো। নাদিয়া সাথে ছিলাম বলেই হয়তো জিজ্ঞেস করেনি। তাছাড়া আমিও তাদেরকে বলে দিয়েছি আমার যখন ইচ্ছে বাসায় ফিরব কেউ কিছু বলতে পারবে না। ঘুমানোর আগে আমার রুমে বাবা মা দুজনে এসে আমাকে বলল।
" নাদিয়ার সাথে বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে চাই। তোর কি ওকে পছন্দ হয় না? ও কিন্তু তোকে ভীষণ পছন্দ করেছে। তোর সাথে বিয়ে হবে এটা ভেবে সবসময় ফুরফুরে মেজাজে থাকে সে। এতটা হাসিখুশি এর আগে কখনোই দেখিনি তাকে। ওর সাথে বিয়ে হলে তুইও ভালো থাকবি।"
আমার অনেক ঘুম পাচ্ছিল তারপরও ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বললাম।
"আচ্ছা সত্যি করে আমাকে একটা কথা বলবেন? নাদিয়ার মতো এতো সুন্দর একটা মেয়ে আমাকে কেনো বিয়ে করতে চাচ্ছে? সে তো চাইলে আমার থেকে বেটার কাউকে বিয়ে করতে পারবে অনায়াসে। সেই চেহারা এবং যোগ্যতা দুটোই তাঁর রয়েছে। তাঁর কি কোনো অতীত আছে যেটা আমি জানি না?"
আমার কথার কোনো উত্তর আমি পেলাম না। বাবা মা দুজনেই চুপ করে রইলেন। কিছু সময় পর মা আমাকে সত্যি টা বললেন যেটা আমি এতোদিন জানতাম না। মা অনেকটা কাঁদতে কাঁদতে বললেন।
"নাদিয়া ওর বাবা মায়ের একটামাত্র সন্তান। ছোটো থেকেই যখন যা চেয়ে তাই পেয়েছে। কখনোই কোনোকিছুর কমতি রাখেনি। তাই বোঝার পর থেকে নাদিয়া সেটাই করত যেটা তাঁর ভালো লাগত। এমন করেই একটা ছেলের সঙ্গে তাঁর প্রেম হয়ে যায়। ছেলেটাকে সে মন থেকে ভালোবেসেছিলো। আমরা সবাই মেনেও নিয়েছিলাম। বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন আগে ছেলেটা নাদিয়াকে বলে দেয় সে নাদিয়াকে বিয়ে করতে পারবে না। ঠিক কি কারণে ছেলেটা নাদিয়ার সাথে এমন করেছে নাদিয়া আজও জানতে পারেনি। সেদিন থেকেই নাদিয়া পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়। সে কাউকে চাইলেও ভালোবাসতে পারে না,আমরা তাঁর অনেক বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। সবশেষে তোমার সম্পর্কে বলার পর সে তোমার সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছে।"
আমি সব শোনার পরে ওনাদেরকে চলে যেতে বললাম। নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করলাম। তার মানে আমি সবার কাছেই অপশন মাত্র। আমি নেগেটিভ মানুষ। কোনোকিছু চিন্তা করতে গেলে কেনো জানি সবার সম্পর্কে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা চলে আসে। এই যে এখন যেমন নাদিয়াকে নিয়ে হচ্ছে। সে কি ছেলেটাকে খুব গভীরতা নিয়ে ভালোবেসেছিলো,তাঁর সাথে কি নাদিয়া সবকিছু করেছে? গ্রামের মেয়েরাই আজকাল কতকিছু করে,আর সেখানে তো সে শহরে বড় হয়েছে। ছি! কিসব ভাবছি আমি। একটা মেয়ে সম্পর্কে না জেনে না শুনে কতো কি ভেবে বসলাম। আমি তাকে সর্বোচ্চ না বলতে পারি তাকে বিয়ে করব না। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে এভাবে নোংরা চিন্তা করার অধিকার আমার নেই। আমি এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসল না।
আমি নাদিয়ার রুমে গিয়ে দরজাতে আস্তে করে নক করলাম। নক করার কিছু সময় পর দরজাটা খুলে দিলো। নাদিয়া শুধুমাত্র গেঞ্জি পড়ে আছে আমার সামনে। নাদিয়াকে আগে কখনো এমন পোশাকে দেখিনি,শুধু তাকে কেনো? আমার জীবনে কোনো মেয়কেই এমন পোশাকে দেখিনি কখনো। কতোটা আকর্ষণীয় লাগছিল তাকে সেটা বলতে পারব না আমি। তাঁর চোখেমুখে তাকাতে পারছিলাম না। তাকে কাছে পাওয়ার লোভ জন্ম নিচ্ছিলো। মনে হচ্ছিল এই পবিত্র ঠোঁটের স্পর্শ পেলে জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকবে না আমার। পরক্ষণেই নিজেকে কাল্পনিক ভাবনা থেকে সরিয়ে নিয়ে বাস্তবে প্রতিস্থাপন করলাম। নাদিয়া আমাকে দেখে বলল।
" আপনি এতো রাতে? ভিতরে আসুন।"
আমি কথা না বাড়িয়ে ভিতরে গিয়ে তাঁর বিছানায় বসে পড়লাম সে বলার আগেই।
আমি তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম।
"কাজটা আপনি মোটেই ঠিক করেননি। আপনি আমাকে বলতে পারতেন। কিন্তু এভাবে নিজের অতীত লুকিয়ে কাউকে বিয়ে করাটা কি ধোঁকার মাঝে পড়ে না? আপনি কোন ছেলের সাথে না কোন ছেলের সাথে কি করেছেন সেটা তো আমি জানি না। দেখেন,আমি নেগেটিভ চিন্তাভাবনার মানুষ। তাই আমি চাইলেও পজিটিভ চিন্তাভাবনা করতে পারি না। এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছি যেখানে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা ছাড়া কিছু আসত না মনে। বাবা যখন মাকে সন্দেহ করত,মা যখন বাবাকে সন্দেহ করত। তখন থেকেই আমি পজিটিভ চিন্তা করতে পারি না৷ কেনো জানি নেগেটিভ জিনিসটা আমার মনের ভিতরে ঘুরপাক খায় সবসময়। আরও অনেক কারণ আছে আমার এমন চিন্তাভাবনার পেছনে। তবে সত্যি যাই হোক না কেনো আপনি আমাকে সব বলতে পারতেন। সব মেনে নিয়েই আপনাকে আমি বিয়ে করতাম কিন্তু এভাবে সব গোপন রেখে কাউকে বিয়ে করাটাকে আমি প্রতারণা মনে করি। ভালো থাকবেন। তবে আপনি যদি বিলাসিতা বিসর্জন দিয়ে আমার সাথে যেতে চান তাহলে যেতে পারেন। আমি গ্রামের বাড়ি চলে যাবো,আপনি চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন। আমি আপনাকে বিলাসিতায় রাখতে পারব না,তবে ভালো রাখার চেষ্টা করব। আমার মনে হয় না আপনি এই ভুলটা করবেন। তারপরও আপনাকে বললাম। কারণ আমারও একজন মানুষ প্রয়োজন,একাকিত্ব জীবনটার প্রতি বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। আমি জানি না আপনি অতীতে কার সাথে কি করেছেন,সবকিছু মেনে নিয়েই আপনার সাথে থাকব তবে সেটা ইটপাথরের এই শহরে নয়। তাছাড়া আমারও একটা অতীত রয়েছে। আমার ভালোবাসার মানুষটা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল শুধুমাত্র হাইট তাঁর থেকে একটু কম ছিল বলে। মেয়েদের সম্পর্কে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা জন্ম নেওয়ার এটাও একটা কারণ।"
আমি এতো এতো কথা বলার পরেও যখন সে চুপ করে বসে রইলো,তখনই বুঝতে পারলাম সে আমার সাথে যাবে না। আর যাবেই বা কি করে? গ্রামের মানুষ শহরে এসে মানিয়ে নিতে পারলেও শহরের মানুষ গ্রামে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারবে না। অন্তত যারা সবসময় বিলাসবহুল গাড়ি বাড়িতে থেকেছে সবসময়। তারা গ্রামে টিকতে পারবে না। আমি তাই নাদিয়ার রুম থেকে চলে আসি। রাতেই ঢাকা থেকে গ্রামে চলে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নেই। অনেক থেকেছি ঢাকার শহরে,আর নয়। মরলে নিজের গ্রামেই মরব। সকালের অপেক্ষা না করে রাতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লাম। সকাল দশটার সময় গ্রামে গিয়ে পৌছালাম।
আমি ঢাকা ছেড়েছি ঠিক দুটো কারণে। ওখানে আমার ভালো লাগত না,আর দ্বিতীয় কারণটা হলো আমি দেখতে চেয়েছি সত্যিই কি নাদিয়া আমাকে বিয়ে করবে কিনা। এর জন্য তাকে আসার আগে আমি আমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে এসেছি। সে যদি আসে ভালো,তাকে গ্রহণ করে নিব,তাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে শুরু করব। আর যদি সে না আসে তবুও কিছু করার নেই। যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে থাকবে,নিজের জীবনটা আর কখনো নিয়ন্ত্রণ করব না। অন্তত আমার মন বলে নাদিয়া আসবে না। আসলে তখনই চলে আসত আমার সাথে। আমি নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করলাম কিনা জানি না। তবে মাঝেমধ্যে তাঁর কথা মনে হতো,সে আসলে হয়তো জীবনটা অন্য রকম হতে পারত। এমনটা উপলব্ধি করতে শুরু করলাম,কিন্তু নাদিয়া আসে না। দিন যায়,সপ্তাহ যায়,মাস যায় সে আসে না। অথচ আমি তাঁর পথ চেয়ে বসে থাকি কিন্তু সে দেখা দেয় না।
অপেক্ষা মানুষের প্রতি মানুষকে দুর্বল করে তোলে। নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একটা সময় যে নাদিয়াকে ভালওবেসে ফেলব জানতাম না আমি।
দুইমাস পর একদিন হঠাৎ করেই দেখলাম রৌদ্রমাখা বিকেলে একটা মেয়ে আকাশি রঙের শাড়ি পড়ে আমার বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। আমি যখন বুঝতে পারলাম এটা নাদিয়া তখন দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। জিজ্ঞেস করলাম না এই দুইমাস সে কোথায় ছিলো,কেনো আসেনি,দুইমাস পর কেনো আসল? সে যে আমার কাছে এসেছে এতেই আমি খুশি,আর কিছু চাওয়ার নেই আমার। আমি তাকে জড়িয়ে ধরার পর সে বলল।
"খুব বেশি সময় অপেক্ষা করলাম,না? কি করব বলো। তুমি ওই রাতে হুট করে এমন করে বললে,আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলে না। এতো খারাপ লেগেছিল কি বলব। তাই ভাবলাম তোমার একটা শাস্তি হওয়া উচিত। আমি জানতাম তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করব। ইচ্ছে করেই আসিনি এতদিন।"
আমি তাঁর কথাগুলো শুনলাম কিন্তু কিছু বললাম না তাকে জড়িয়ে ধরে রইলাম। তাকে ছাড়ছিলাম না দেখে সে বলল।
" আর কতক্ষণ এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকবে?"
আমি বললাম।
" জীবনে প্রথম কোনো মেয়েকে এভাবে এতো আপন মনে করে বিশুদ্ধতা নিয়ে জড়িয়ে ধরেছি। এতো সহজেই ছাড়ব না।"
আমার কথার বিপরীতে নাদিয়া বলল।
" জীবনে প্রথম? কেনো ইসরাতে কি জড়িয়ে ধরো নাই কখনো?"
আমি হেসে দিয়ে বললাম।
" ভুলে গিয়েছি।"
সে আমাকে ছাড়তে বলে কিন্তু আমি ছাড়ি না। ইচ্ছে করছে এভাবেই আদি অনন্তকাল তাকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকি। ভালোবাসার মানুষকে প্রথমবার জড়িয়ে ধরার মাঝে এতটা মোহ কাজ করে জানা ছিল না কখনো। আমি যখন নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরে থাকার পণ করলাম তখন সে আমাকে সজোরে দু-হাত দিয়ে নিজেকে হালকা একটু ছাড়িয়ে নিয়ে তাঁর পবিত্র ঠোঁট দিয়ে আমার অপবিত্র ঠোঁটটাকে কিছুক্ষণের জন্য ছুয়ে দিলো। আমি তাকে আর জড়িয়ে ধরে থাকতে পারলাম না। পুরোপুরি সকড খেয়ে দাড়িয়ে রইলাম। সে আমাকে রেখে ঘরে চলে গেলো। চলে যাওয়ার আগে বলল।
"তোমাকে এমন সকড না দিলে তো আমাকে ছাড়তে না,জড়িয়ে ধরেই থাকতে। তাই দিতে হলো। কিছু মনে করো না। তুমি এমন একটা বিশুদ্ধ চুমু ডিজার্ভ করো।"
সমাপ্ত।
0 Comments